ঢাকা ০৫:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদেশগামী কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক বিমা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪৫:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ জুলাই ২০১৯
  • ২৩৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে বিমার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বিমা হবে কর্মীবান্ধব ও প্রতিযোগিতামূলক। এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১৮ সালে মোট সাত লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন কর্মী এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশে গেছেন। এ সময় বিদেশে মৃত্যুবরণকারী মোট তিন হাজার ৭৯৩ জন কর্মীর মৃতদেহ দেশে ফেরত আসে।

এর মধ্যে ৭০০ জন কর্মী বিদেশ গমনের দুই বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এবং প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক সামর্থ্যকে বিবেচনায় এনে প্রস্তাবিত বিমা পরিকল্পের প্রিমিয়ামের অর্থ পর্যালোচনা করার জন্য জীবন বিমা করপোরেশনকে অনুরোধ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব বাংলাদেশি বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করছেন, তারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে দুর্ঘটনার কারণে অনেক কর্মী শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসেন। তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই  প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিদেশগামী কর্মীদের বিমা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে।

সম্প্রতি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিতে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বিদেশগামী কর্মীদের বাধ্যতামূলক বিমার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বৈঠকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, এদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং অভূতপূর্ব উন্নয়নে আমাদের প্রবাসী কর্মীদের পরিশ্রমলব্ধ রেমিট্যান্সের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিদেশগামী কর্মীদের বাধ্যতামূলক বিমার আওতায় আনার লক্ষ্যে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা যেন কর্মীবান্ধব হয় অর্থাৎ কর্মীদের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ না পড়ে। তাছাড়া সবচেয়ে কম প্রিমিয়ামে কর্মীদের কিভাবে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিমার প্রিমিয়াম, বিমার অংক ও প্রাপ্য সুবিধা নির্ধারণ করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, প্রবাসী কর্মীদের মানসম্মত বিমা সেবা দেওয়া, বিমার দাবি আদায় নিশ্চিত করার জন্য বিমা ব্যবস্থাপনাকে গতিশীল, আধুনিক এবং জবাবদিহিমূলক করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বিমা ব্যবস্থাকে প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে জীবন বিমা করপোরেশনের পাশাপাশি বেসরকারি বিমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিমা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করা যেতে পারে।

সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোর  মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা চালু করা সময়সাপেক্ষ। যতদিন না উভয় মাধ্যমে বিমা ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত জীবন বিমা করপোরেশনের মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের জীবন বিমা করার চিন্তা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইআরডিএ) সঙ্গে কথা বলে জীবন বিমা করপোরেশন প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিমা পরিকল্প প্রস্তুত করেছে। প্রাথমিকভাবে দুই বছরের জন্য কর্মীদের বিমা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব জীবন বিমা করপোরেশনের ওপর দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের পারফরমেন্স যাচাই করে পরবর্তীতে বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোকেও এ সুযোগ দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করা যেত। প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিমা প্লান-বি অনুযায়ী পাঁচ লাখ টাকার বিমার বিপরীতে প্রিমিয়াম দুই হাজার ৯২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে জীবন বিমা করপোরেশন। সেক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের টাকা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কর্মী, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং সরকারের ভর্তুকির মাধ্যমে পরিশোধ করার চিন্তা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা বলেন, প্রবাসীকল্যাণ  ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যেসব বাংলাদেশি কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশ গমন করেন তাদের বেশির ভাগই অস্বচ্ছল পরিবারের সদস্য। তাই তাদের জন্য বিমা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্যে এমনভাবে প্রিমিয়ামের হার নির্ধারণ করতে হবে, যাতে তারা আর্থিক চাপের সম্মুখীন না হন এবং বিমার দাবি আদায়ে যেন কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার না হন। এসব বিষয় চিন্তা করেই বিদেশগামী কর্মীদের জন্য জীবন বিমা বাধ্যতামূলক করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বিদেশগামী কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক বিমা

আপডেট টাইম : ০৬:৪৫:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ জুলাই ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে বিমার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বিমা হবে কর্মীবান্ধব ও প্রতিযোগিতামূলক। এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১৮ সালে মোট সাত লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন কর্মী এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশে গেছেন। এ সময় বিদেশে মৃত্যুবরণকারী মোট তিন হাজার ৭৯৩ জন কর্মীর মৃতদেহ দেশে ফেরত আসে।

এর মধ্যে ৭০০ জন কর্মী বিদেশ গমনের দুই বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এবং প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক সামর্থ্যকে বিবেচনায় এনে প্রস্তাবিত বিমা পরিকল্পের প্রিমিয়ামের অর্থ পর্যালোচনা করার জন্য জীবন বিমা করপোরেশনকে অনুরোধ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব বাংলাদেশি বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করছেন, তারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে দুর্ঘটনার কারণে অনেক কর্মী শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসেন। তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই  প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিদেশগামী কর্মীদের বিমা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে।

সম্প্রতি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিতে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বিদেশগামী কর্মীদের বাধ্যতামূলক বিমার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বৈঠকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, এদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং অভূতপূর্ব উন্নয়নে আমাদের প্রবাসী কর্মীদের পরিশ্রমলব্ধ রেমিট্যান্সের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিদেশগামী কর্মীদের বাধ্যতামূলক বিমার আওতায় আনার লক্ষ্যে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা যেন কর্মীবান্ধব হয় অর্থাৎ কর্মীদের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ না পড়ে। তাছাড়া সবচেয়ে কম প্রিমিয়ামে কর্মীদের কিভাবে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিমার প্রিমিয়াম, বিমার অংক ও প্রাপ্য সুবিধা নির্ধারণ করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, প্রবাসী কর্মীদের মানসম্মত বিমা সেবা দেওয়া, বিমার দাবি আদায় নিশ্চিত করার জন্য বিমা ব্যবস্থাপনাকে গতিশীল, আধুনিক এবং জবাবদিহিমূলক করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বিমা ব্যবস্থাকে প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে জীবন বিমা করপোরেশনের পাশাপাশি বেসরকারি বিমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিমা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করা যেতে পারে।

সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোর  মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা চালু করা সময়সাপেক্ষ। যতদিন না উভয় মাধ্যমে বিমা ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত জীবন বিমা করপোরেশনের মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের জীবন বিমা করার চিন্তা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইআরডিএ) সঙ্গে কথা বলে জীবন বিমা করপোরেশন প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিমা পরিকল্প প্রস্তুত করেছে। প্রাথমিকভাবে দুই বছরের জন্য কর্মীদের বিমা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব জীবন বিমা করপোরেশনের ওপর দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের পারফরমেন্স যাচাই করে পরবর্তীতে বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোকেও এ সুযোগ দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করা যেত। প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিমা প্লান-বি অনুযায়ী পাঁচ লাখ টাকার বিমার বিপরীতে প্রিমিয়াম দুই হাজার ৯২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে জীবন বিমা করপোরেশন। সেক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের টাকা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কর্মী, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং সরকারের ভর্তুকির মাধ্যমে পরিশোধ করার চিন্তা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা বলেন, প্রবাসীকল্যাণ  ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যেসব বাংলাদেশি কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশ গমন করেন তাদের বেশির ভাগই অস্বচ্ছল পরিবারের সদস্য। তাই তাদের জন্য বিমা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্যে এমনভাবে প্রিমিয়ামের হার নির্ধারণ করতে হবে, যাতে তারা আর্থিক চাপের সম্মুখীন না হন এবং বিমার দাবি আদায়ে যেন কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার না হন। এসব বিষয় চিন্তা করেই বিদেশগামী কর্মীদের জন্য জীবন বিমা বাধ্যতামূলক করা হবে।